মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১

ওয়াজিব কোরবানি শিরক

 

কুরবানির শরিয়া, খসড়া 14.09.2021

আবু রায়হান মুহম্মদ খালিদ

তারিখঃ ৩১শে আগস্ট, ২০২১

প্রতি

দারুল ইফতা, ... 

বিষয়ঃ আমার কুরবানির শরিয়া বিষয়ক প্রশ্নের আপনাদের প্রেরিত ৩০শে আগস্ট তারিখের জবাব।

মুহতারাম, সালাম।

আমার প্রশ্নের জবাব প্রদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আপনি উত্তরের শেষে আমার যদি এর পরেও কোন প্রশ্ন থাকে তবে আপনাদের জানাতে বলেছেন। আপনাদের সে ঔদার্যের সুযোগ গ্রহন করে এই পত্র লিখছি। জাজাকাল্লাহু খাইরান।

মহোদয়, আপনি আপনার জবাবে ৩ টি রচনায় আমার প্রশ্নের জবাব রয়েছে বলেছেন। রচনাগুলি আমি সংগ্রহ করে পাঠ করেছি। এগুলো হলঃ

১। মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক সাহেবের কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে কুরবানী, মাসিক আল কাউসার, বর্ষ: ০৪, সংখ্যা: ১১, এই ওয়েবসাইটেঃ https://www.alkawsar.com/bn/article/1451/;

২। মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া সাহেবের কুরবানী সংক্রান্ত কিছু জরুরি মাসায়েল, মাসিক আল কাউসার, বর্ষ: ১৩, সংখ্যা: ০৮, এই ওয়েবসাইটেঃ https://www.alkawsar.com/bn/article/2154/; ও

৩। মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ সাহেবের কুরবানী বিষয়ক কিছু হাদীস, মাসিক আল কাউসার, বর্ষ: ০৫, সংখ্যা: ১২, এই ওয়েবসাইটেঃ https://www.alkawsar.com/bn/article/63/

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক সাহেব আল কুরআনুল আজিমের বিভিন্ন আয়াত উল্লেখ করেছেন, তবে বলেছেনঃ “এ কুরবানীর বিধান মৌলিকভাবে সূরা হজ্ব আয়াত ২৭-৩৭, সূরা বাকারা আয়াত ১৯৬, সূরা মাইদা আয়াত ২, ৯৫-৯৭, সূরা ফাতহ আয়াত ২৫-এ এসেছে। আর হাদীস শরীফে তা উল্লেখিত হয়েছে বিস্তারিতভাবে” (সুত্রঃ উপরোক্ত); মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া সাহেব বলেনঃ  “কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব”; এবং “প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব”; ও “আর নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া”, উনি এর উৎস হিসাবে “আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫” এর দলীল দিয়েছেন (সুত্রঃ উপরোক্ত)। আর মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ সাহেব অনেকগুলো সুন্নাতুন-নবী এর হাদিস উল্লেখ করেছেন কিন্তু তার কোথাও কোরবানির ওয়াজিব হুকুম, অর্থাৎ একজন ব্যাক্তির কি পরিমান সম্পদ থাকলে (নেসাব) কোরবানি ওয়াজিব হয় – এমন কোন হাদিস নেই (সুত্রঃ উপরোক্ত)।

দেখা যায় কোরবানির শরিয়া মুহতারাম আলেমগন এই উৎস থেকে পেশ করছেনঃ সূরা হজ্ব আয়াত ২৭-৩৭, সূরা বাকারা আয়াত ১৯৬, সূরা মাইদা আয়াত ২, ৯৫-৯৭, সূরা ফাতহ আয়াত ২৫, আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫। আমাদের গবেষণায় আমরা দেখি যে মুফতি মোহাম্মদ শোয়েইব, সম্পাদক, মাসিক আল-হেরা, তাঁর ইংরেজি ভাষায় রচিত “রুলস অফ কুরবানি, (১১ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে ডেইলি সান পত্রিকায় প্রকাশিত https://www.daily-sun.com/arcprint/details/414821/Rules-of-Qurbani/2019-08-11) রচনায় রা’দ-উল-মুহতার, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ১৭১ এর দলিলে ৬১২.৩৬ গ্রাম রৌপ্য বা ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণ এর মালিকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব বলে মত দিয়েছেন।

এখন আমরা বর্ণীত আল কুরআনুল আজিমের পবিত্র আয়াতগুলো দেখি। সুরা হজ্ব আয়াত ২৭-৩৭ এ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেনঃ

আউজুবিল্লাহি মিনাশাইতানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

“ওয়া আজজিন ফিন-নাসই বিল হাজ্জই” (২৭, আংশিক); “ওয়া ইয়া জুকরুসমাল্লাহি ফিই আইয়ামিম্মা’লুমাতিন আলাআ মা রাজাকাহুম ম্মিন বাহিইমাতিল আন’আমই (২৮, আংশিক); “লাকুম ফিহা মানাফিউ ইলা আজালিন মুসামমান সুমমা মাহিললুহা ইলা ল-বায়তি ল-আতিক” (৩৩, আংশিক, উচ্চারনঃ “Quran Hadith BD - http://quranhadithbd.com/sura/22?s=” “ওয়া লিকুল্লি উম্মাতিন যাআলনা মানসাকা ল্লিইয়াজকুরুসমাল্লাহি আলাআ মা রাজাকাহুম ম্মিন বাহিইয়া’তিল আন’আমই” (৩৪, আংশিক, উচ্চারণ লেখকের); “ফাজকুরুঅসমাল্লাহি আলাইহা সাওয়ায়াফফা” (৩৬, আংশিক); “লাইয়ানালা ল্লাহা লুহুঅমুহা ওয়া লা দিমাআউহা ওয়া লা কিনইইয়ানালুহু ত্তাকুওয়া মিনকুম” (৩৭, আংশিক), ভাষ্য আল-কুরআনুল কারিম, ইসলামিক ফাউনডেশন বাংলাদেশ, ২০০৭, ISBN: 984-06-0345-X)।

দেখা যায় সুরা হাজ্জ্বের এই আয়াতে কারিমাগুলোয় আল্লাহ্‌ পাক হজের শরিয়া বর্ণনা করছেন, এবং তার অংশ হিসাবে ইরশাদ করেছেন মানুষের নিকট হাজ্জের ঘোষণা করে দিতে যাতে তারা “কল্যাণময় স্থানগুলিতে” উপস্থিত হয়ে রিজকের পশুর ওপর আল্লাহর নাম নিতে পারে (২৭, ২৮- আংশিক); যে “কুরবানীর স্থান হবে প্রাচীন ঘরের নিকট” (৩৩, আংশিক); “প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিয্ক হিসেবে দিয়েছেন তার উপর” (অনুবাদঃ আল-বায়ান, Quran Hadith BD, পূর্বোক্ত)। ৩৪ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন যে নুসুকের হুকুম দিয়েছেন, তা একই সুরার ২৭ নং আয়াতের হজ্জের ও হজকালীন কুরবানির ধারাবাহিকতা। আয়াতে কারিমার নিকটবর্তী ও সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলো অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে এই কুরবানি হবে হজের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে (আয়াত নং ২৮) কল্যাণময় স্থানে (আয়াত নং ২৮), কুরবানির পর কুরবানি যে করেছে সে ‘প্রাচীন গৃহের তাওয়াফ’ করবে (আয়াত নং ২৯), ‘কুরবানির স্থান বাইতিল আ’তিইক’ বা প্রাচীন গৃহের নিকট (আয়াত নং ৩৩)।  

আমরা দেখি যে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন সুরা হাজ্জের এই আয়াতগুলোর কোথাও “৬১২.৩৬ গ্রাম রৌপ্য বা ৮৭.৪৮ গ্রাম স্বর্ণ এর মালিকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব” (রা’দ-উল-মুহতার, ইত্যাদি) এবং প্রতি বৎসর সে পরিমান সম্পদের মালিক নিজ বাড়ীতে (বাইতুল্লার নিকটে নয়) কোরবানি করার হুকুম দেন নি।

সুরা বাকারার ১৯৬ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

“ওয়া আতিম্মুঅল হাজ্জা ওয়াল উ’মরাতা লিল্লাহি; ফা ইন উহসিউতুম ফামাসতাইসারা মিনাল হাদঈ”; “আও সাদাকাতিন আও নুসুকিন”; “ফা ইজাআ আমিনতুম; ফামান তামাত্তাআ’ বিল উমরাতি ইলাল হাজ্জি ফামাসতাইসারা মিনাল হাদঈ” (আংশিক, উচ্চারণ লেখকের,), সুত্রঃ উপরোক্ত)।

আল্লাহ্‌ পাক সুরা মাইদার ২ নং আয়াতে শুধু “হাদইয়া” এবং “কালাআইদা” এর “পবিত্রতার অবমাননা” না করতে নির্দেশ দিয়েছেন, এতে কুরবানির আহকাম নেই (অনুবাদঃ আল-কুরআনুল কারিম, পূর্বোক্ত); সুরা মাইদার ৯৫-৯৭ আয়াতে আল্লাহ্‌ পাক “ইহরামে থাকা কালে শিকার-জন্তু হত্যা” না করতে, আর “কেহ ইচ্ছাকৃত ভাবে ইহা হত্যা করিলে” “তাহার বিনিময়” হবে অনুরুপ “হাদইয়া”(৯৫, অনুবাদঃ আল-কুরআনুল কারিম, পূর্বোক্ত); ৯৭ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ পাক ইরশাদ করেন যে “হাদইয়া” এবং “কালাআইদা” আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন “মানুষের কল্যানের জন্য নির্ধারিত” করেছেন (অনুবাদঃ আল-কুরআনুল কারিম, পূর্বোক্ত)। এ ও কুরবানির শরিয়া নয়, বরঞ্চ হজ এর শরিয়া।

আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন সূরা ফাতহ আয়াত ২৫ এ ইরশাদ করেন যে যারা “কুফরি” করেছিল, তারা “সাদদুউকুম আনিল মাসজিদুল হারামই ওয়াল হাদইয়া”, অর্থাৎ “বাধা দিয়েছে তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে এবং অবস্থানরত কোরবানীর জন্তুদেরকে যথাস্থানে [মসজিদুল হারাম এ] পৌছতে” (ভাষ্য, উচ্চারণ ও অনুবাদঃ Quran Hadith BD, পূর্বোক্ত, ব্রাকেটে ব্যাখ্যা লেখকের)। এখানেও কোরবানির শরিয়া নেই, প্রাসঙ্গিক আয়াত রয়েছে এবং এখানেও সুরা হাজ্জের ৩৩ নং আয়াতে ব্যাক্ত কুরবানির স্থান হিসেবে মসজিদুল হারামের নাম আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন পুনুরোল্লেখ করেছেন।

উপরোক্ত আয়াত গুলোকে “মৌলিক” বলে ঘোষণা করলেও মুহতারাম মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক সাহেব সুরা মাইদার আয়াত ২৭-৩১, “সূরা আনআমের ১৬১-১৬৩ আয়াতে এবং সূরা কাউসারের ২ আয়াতে “কুরবানী উল্লেখিত হয়েছে” বলে উল্লেখ করেন এবং আমাদের জানান যে “বিস্তারিত বিধি-বিধান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহতে  রয়েছে”, যদিও বাস্তবে রাসুলুল্লাহ সাঃ সুন্নাহে কুরবানির বিস্তারিত বিধান নেই, আছে আলমুহীতুল বুরহানী, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, রা’দ-উল-মুহতার ইত্যাদি মানব রচিত বইয়ে। মুহতারাম যে হাদিস গুলো উল্লেখ করেছেন তা ও আমরা পরিক্ষা করে দেখবো ইনশাআল্লাহ্‌।

আমরা এই আয়াতে কারিমা গুলোও পরিক্ষা করে দেখবো।

সুরা মাইদার আয়াত ২৭-৩১

আয়াত নং ২৭ এ আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেনঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,

“ওআ-তলু আলায়হিম নাবাআ বনায় আদামা বি-ল-হাককি ইজ কাররাবা কুরবানান ফা-তুকুববিলা মিন আহাদিহিমা ওআ-লাম য়ুতাকাববাল মিনা ল-আখারি কালা লা-আকতুলাননাকা কালা ইননামা য়াতাকাববালু ললাহু মিনা ল-মুততাকিন”; অর্থঃ “আর তুমি তাদের নিকট আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপরজন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’ অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে গ্রহণ করেন’” (ভাষ্য, উচ্চারণ, ও অনুবাদঃ https://quranhadithbd.com/sura/5)।

২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে আর কোরবানির কথা নেই, বরং বর্ণীত হয়েছে এক ভাই কত্রিক অন্য ভাইকে হত্যা ও সমাহিত করার বর্ণনা।

সূরা আনআমের ১৬১-১৬৩ আয়াত

এই সুরার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেনঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,

“কুল ইননা সালাতি ওআ-নুসুকি ওআ-মাহয়ায়া ওআ-মামাতি লি-ললাহি রাববি ল-আলামিন”; অর্থঃ “বল, ‘নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব”, (ভাষ্য, উচ্চারণ, ও অনুবাদঃ https://quranhadithbd.com/sura/6 )। ১৬১, ১৬৩ নং আয়াতে কোরবানির উল্লেখ নেই, বরং প্রাসঙ্গিক অন্য বক্তব্য রয়েছে।

সূরা কাউসারের ২ আয়াত

(এই অংশটুকু অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ৩১শে জুলাই, ২০২১ তারিখে অনলাইনে ফেসবুক ডট কম এ প্রকাশিত)

সুরা আল-কাউসারের ২ নং আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেনঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

“ফা-সাললি লি-রাববিকা ওআ-নহার”; অর্থঃ "অতএব তোমার রবের উদ্দেশ্যেই সালাত পড় এবং নহর কর" (অর্থ কুরবানী কর) অনুবাদ "আল-বায়ান", (ভাষ্য, উচ্চারণ, ও অনুবাদঃ https://quranhadithbd.com/sura/108)।

অনেকেই এই আয়াতে কারিমার শেষ শব্দটি “আনহার” এর অনুবাদ করেছেন "কুরবানী কর"। এমনকি আমি এর ভিন্ন কোন তরজমা কোথাও দেখিনি।

কিন্তু ভাষা বিজ্ঞান মতে আনহার’ শব্দটির ‘মাসদার’ বা মুল হল নুন-হা-রে আর এর অর্থ কুরবানি করা নয়। অভিধান মতে এর অর্থ "প্রশস্ত করলো, নাব্য করলো"। সুত্রঃ আরবি বাংলা-অভিধান, কামুস আরাবিই বাঙ্গালা, ইসলামিক ফাউনডেশন, ২০০৬, ISBN: 984-06-1094-5, (পরবর্তীতে 'ইফা' বলে উল্লেখিত) প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৩৮৪।

আরবি নুন-হা-রে বা নহর থেকে ‘আনহার’ কথাটির উৎপত্তি (ইফা, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৩৮৪) ; আর ‘নহর’ দুই বানানেই লেখা হয়, আরবি বর্ণমালায় যে ‘হা’ উচ্চারণের দুটি বর্ণ রয়েছে, তার উভয়টি দ্বারা - কোথাও হা’য়ে হাওয়ায (আরবি বর্ণমালার ২৯ টি হরফের ৬ নং বর্ণ) দ্বারা আর কোথাও হা’য়ে হুত্তি (২৭ নং বর্ণ) দ্বারা - ইফা অভিধান থেকে দৃষ্ট হয় যে এতে এদের অর্থের কোন ফারাক হয় না। বর্ণের উচ্চারণ নির্দেশ মাওলানা মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ রচিত ‘নূরানি পদ্ধতিতে কোরআন [আজিম] শিক্ষার সহজ উপায়’, ফাতেমা কোরআন মহল, ঢাকা, ২০১৪, ISBN: অনুল্লেখিত, পৃষ্ঠা নং ১৪ থেকে গৃহীত।

এখন ‘নাহারা’ (নুন যবর হা’য়ে হাওয়ায যবর রা যবর) অর্থ "প্রবাহিত করলো" (ইফা, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৯১৯); আর نَهَرَ ‘নাহারা’ (নুন যবর হা’য়ে হুত্তি যবর রা যবর) এর বিশুদ্ধ অর্থ অভিধানটিতে নেই, ‘নাহারাল মাউ’ অর্থ "প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হল এবং নদীতে পরিনত করল" (ইফা, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং ৯৮২), বা ‘নাহারা দ্দামু’ অর্থ “রক্ত বেগে প্রবাহিত হল” (ঐ)। নাহরুন (নুন যবর হা’য়ে হুত্তি

আর نَهْرٌ অর্থ "নদী, তটিনী, ... প্রবাহিণী" ইত্যাদি (ঐ)। বা "A copious natural stream of water flowing in a channel to the sea or a lake etc"

https://www.almaany.com/en/dict/ar-en/%D9%86%D9%87%D8%B1/

তবে একটি অভিধানে আমি نَحَرَ অর্থ "to slaughter, butcher, kill" দেখেছি - এটি যদিও আমাদের আলোচিত ভাষা বিজ্ঞান মতে শব্দটির শুদ্ধ অর্থ নয়, বরং কথ্য অর্থ বা বাগধারা বলে প্রতিয়মান হয়ঃ দেখুন Balbaki, R., Al-Mawrid, Arabic_English dictionary, 1995, পৃষ্ঠা ١١٦٢

সুরা বায়্যিনা এর ৮ নং আয়াতটিতে - বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম- "جَزَآؤُهُمۡ عِنۡدَ رَبِّهِمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ" বা সুরা বাকারার ২৫ নং আয়াতের "جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ" এর কথা স্মরন করুন - "تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ" এ বাক্যাংশটি আল-কুরআনুল আজিমের আরও বহু আয়াতে কারিমায় আল্লাহ পাক বেহেশতের বর্ণনা দিতে গিয়ে ব্যবহার করেছে। এখানে الۡاَنۡهٰرُ কথাটির অর্থ কিন্তু কেউ কুরবানি করেননি, নদী করেছেন।

তাহলে دًمُ বা রক্ত কথাটি যোগ না করলে শুধু نَهْرٌ বা انۡحَرۡ এর সাথে প্রবাহ এর সম্পর্ক রয়েছে - রক্ত এর কোন সম্পর্ক নেই। তাই انۡحَرۡ অর্থ কোন কিছু বইয়ে দেয়া, প্রবাহিত করা - কোরবানি করা নয়।

অতএব, Al-Mawrid অভিধানে نَحَرَ এর অর্থ to slaughter... ইত্যাদি আল-কুরআনুল আজিমের অন্যত্র আল্লাহ পাক যে অর্থে শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

ভাষা বিজ্ঞান অংশ শেষ হল। এখন আসুন আইন অংশেঃ

তাহলে ওপরের আলোচনা থেকে প্রমানিত হয় যে সুরা আল-কাউসারের ২ নং আয়াতের انۡحَرۡ আদেশটি কোরবানি করার আদেশ নয়। আল্লাহু আকবর!

আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হুকুম করেছেন তাঁর আদেশ ছাড়া আর অন্য কারো আদেশ প্রতিপালন না করতে - করলে শিরক হবে।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

وَ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشۡرِکُوۡا بِهٖ شَیۡئًا ...

(সুরা নিসা, আয়াত নং ৩৬, আংশিক উধ্রিত, ভাষ্য এখান থেকেঃ https://hadithbd.com/quran/filter/?sura=4...)

জাজাকাল্লাহু খাইরান।

পুনশ্চঃ কোন ব্যখ্যা প্রয়োজন হলে দয়া করে আমাকে জিজ্ঞাসা করুন। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী জবাব দিতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন