বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ০৩, ২০১৬

গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে ভারতের সাড়া

ভারতের রাজী হওয়ার থেকে বড় প্রশ্ন বাংলাদেশীরা রাজী কিনা।
বাংলাদেশীরা রাজী হয়েছে?
এ বিষয়ক পরিবেশগত সমীক্ষা হয়েছে? হলে সেটি প্রকাশিত হলে জনগন ভেবে দেখতে পারে তারা রাজী কিনা।
বাংলাদেশীরা রাজী হলে তখন ভারতকে জিজ্ঞাসা করার প্রশ্ন।
এ সংক্রান্ত কাগজ পত্র প্রকাশ করতে সরকারের প্রতি আহবান জানাই।

সুত্রঃ http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1013471/গঙ্গা-ব্যারাজ-নির্মাণে-ভারতের-সাড়া

বাংলাদেশে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে সহযোগিতায় রাজি হয়েছে ভারত। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পদ্মা-তীরবর্তী এবং এর আশপাশের আট জেলার ১৯ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের সুযোগ তৈরি হবে। ফলে খাদ্য ও মাছের উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি প্রায় ১২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও পাওয়া যাবে।


এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের ইতিবাচক মনোভাব দরকার ছিল। সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে ঢাকায় দুই দেশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে ভারত ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তবে এ প্রকল্পের কারণে ভারতের কোনো ক্ষতি হবে না—এটি নিশ্চিত করতে নিজেদের অংশে যৌথ সমীক্ষার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। জানুয়ারির মধ্যে সমীক্ষা শেষ করে দ্রুত প্রকল্পের কাজ শুরুর ওপর জোর দিচ্ছে দুই দেশ।


এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা বা ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার। বিশ্বব্যাংক, জাপান, মালয়েশিয়া ও চীন এই প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, গত সপ্তাহের বৈঠকে গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে ভারত জোরালো অঙ্গীকার করেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে গঙ্গা ব্যারাজ বাস্তবায়নে ভারতের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে। আগামী ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি যাওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এলে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে তাঁর দেশের সহযোগিতা চান শেখ হাসিনা। মোদি বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সর্বশেষ আলোচনায় যে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে, তা গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ দ্রুত শুরুর ক্ষেত্রে বেশ বড় ধরনের অগ্রগতি। কারণ, নিকট প্রতিবেশী ও উজানের দেশ ভারতের সম্মতি ছাড়া এটি এগিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব।


পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ভারতের একটি প্রতিনিধিদল গত মাসের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে এসে প্রথমে গঙ্গা ব্যারাজের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখেন। এরপর ২৭ অক্টোবর ঢাকায় একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে ভারতের নেতৃত্ব দেন সে দেশের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলী (এইচএসও) ভুপাল সিং এবং বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবদুল হাই বাকী।
আবদুল হাই বাকী গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারতে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না—এটি নিশ্চিত করতে তাদের অংশে সমীক্ষার প্রস্তাব দেয় ভারত। তাদের মতে, প্রকল্পের বাংলাদেশের অংশের পাশাপাশি ভারতীয় অংশে সমীক্ষা চালানোর পর প্রকৃত চিত্র উঠে আসবে। তার ভিত্তিতে দুই দেশের গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। দুই দেশের সমান সংখ্যক কারিগরি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ মাসের শেষে একটি যৌথ কমিটি গঠনের পর সমীক্ষা শুরু হবে। এই কারিগরি কমিটি প্রকল্প এলাকার যে অংশে ভারতের ভূখণ্ডে পড়েছে, সেখানে সমীক্ষা চালাবে এবং এই সমীক্ষার তথ্য-উপাত্ত গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের মূল মডেলের সঙ্গে যুক্ত হবে।


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী বলেন, যৌথ সমীক্ষা শেষ করতে তিন মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তাহলে আগামী বছরের প্রথম ভাগে এটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা যেতে পারে।


জানতে চাইলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, গঙ্গা ব্যারাজ যেহেতু দুই দেশের অভিন্ন নদীর পানিকে কেন্দ্র করে তৈরি হবে, তাই ভারতকে সঙ্গে নিয়েই বাস্তবায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের কোনো উদ্বেগ থাকলে সেটি দূর করা বাঞ্ছনীয়। যৌথ যে সমীক্ষার কথা বলা হচ্ছে, তা শেষ করতে সময় লাগবে না। এটি নির্মাণের প্রক্রিয়া যৌথ ব্যবস্থাপনায় হলে বৈশ্বিক নানা উৎস থেকে তহবিল পাওয়াটাও বেশ সহজ হবে।
ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গা চুক্তিতে বাংলাদেশ যে পানি পায়, তা ধরে রাখতে পারছে না। ভারত থেকে প্রবাহিত পানি শেষ পর্যন্ত সাগরে চলে যাচ্ছে। তাই গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে পাওয়া পানির সদ্ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ গঙ্গা ব্যারাজ তৈরি করতে চায়।


গঙ্গা বাঁধ প্রকল্পে যা হবে: রাজবাড়ী জেলার পাংশায় এই বাঁধ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বাঁধের মাধ্যমে গঙ্গার পানি ধরে রেখে শুকনা মৌসুমে তা ব্যবহার করা হবে। এর ফলে শুকনা মৌসুমে নদ-নদীগুলো পানিতে ভরা থাকবে। সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পানি দিয়ে বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, খুলনা, বরিশাল, পাবনা ও রাজশাহী জেলার প্রায় ১৯ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ নিশ্চিত হবে। ফলে খাদ্য উত্পাদন বাড়বে বছরে প্রায় ২৬ লাখ মেট্রিক টন। গড়াই, নবগঙ্গা, বড়ালসহ গঙ্গানির্ভর নদীগুলোতে পানির প্রবাহ ও নাব্যতা বাড়বে। মাছ উত্পাদন বাড়বে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টন। সুন্দরবনসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অতিরিক্ত লবণাক্ততার সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে। নিরসন হবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মরুকরণ প্রবণতারও।
এই বাঁধের পানি ব্যবহার করে প্রায় ১২৫ মেগাওয়াট পানিবিদ্যুৎ উত্পাদনও সম্ভব হবে। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্দেশীয় নৌচলাচল বাড়বে। বাঁধের ওপর নির্মিত হবে চার লেনের সড়ক, যা দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ নিবিড় করবে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাঁধ ও আনুষঙ্গিক কাজ শেষ হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয় উঠে আসবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন